• শুক্রবার ২৪শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ১০ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    সদরঘাটের নতুন রূপ

    অনলাইন ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর ২০২০ | ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

    সদরঘাটের নতুন রূপ

    সারি সারি কৃষ্ণচূড়া, ঝাউ, মাধবীলতা ও শিউলি ফুলের ঢেউ বুড়িগঙ্গার পারজুড়ে। চারদিকে দৃষ্টিনন্দন ফুলের সৌরভ আর পাতাবাহারের সৌন্দর্য। নদী দখল করে তীরে গড়ে তোলা কলকারখানা ও স্থাপনা বুড়িগঙ্গার টুঁটি চেপে ধরেছিল। আবর্জনা, কলকারখানার বর্জ্য আঁকড়ে ধরেছিল বুড়িগঙ্গার যৌবন। অনিয়ম-বিশৃঙ্খলায় অনেকটা অনুপযোগী বন্দরে পরিণত হয়েছিল সদরঘাট। আস্তে আস্তে নতুন রূপে সাজছে সদরঘাট ও বুড়িগঙ্গাপার। ‘বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’ সেই পুরনো প্রবাদ থেকে বেরিয়ে এক অন্য রকম চেহারায় ফিরছে সদরঘাট।

    পৃথিবীর অন্যতম বড় অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর ঢাকার সদরঘাট। দেশে সড়ক ও রেল যোগাযোগের প্রসার ঘটলেও ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ প্রাচীন এই নৌবন্দরের গুরুত্ব এখনো অনুধাবন করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। কারণ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষের চলাচলের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নৌপথ। বুড়িগঙ্গার নাব্যতা বাড়াতে এবং ভাঙন থেকে নদীপার রক্ষায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সরকারি কয়েকটি সংস্থা।

    আন্তর্জাতিক মানের নৌবন্দর করতে এখন শ্যামবাজার থেকে আহসান মঞ্জিল পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সবুজ বাগান করা হয়েছে। ফুটপাত বা পন্টুন থেকে ভাসমান হকার ও কুলিদের দৌরাত্ম্য করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ। সদরঘাটসহ নদীর দুই পাশে পন্টুনের সংখ্যা ১৩ থেকে বাড়িয়ে ৩০টি করা হয়েছে। নদীর ওপারে আগানগর, আলমনগরে বসানো হয়েছে নতুন তিনটি পন্টুন। নৌকাডুবির মতো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিরাপদ দূরত্বে তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি ঘাট। সবমিলিয়ে এক ছিমছাম নদীবন্দর।

    লঞ্চের জন্য পন্টুনে এখন আর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না যাত্রীদের। বন্দরে বসেই কাচের ঘরের ভেতর থেকে দেখা যায় লঞ্চ আসা-যাওয়ার মুহূর্ত। নারী-পুরুষের জন্য করা হয়েছে আলাদা অপেক্ষমাণ কক্ষ। আছে ভিআইপি অপেক্ষমাণ কক্ষ ও শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর ব্যবস্থা। বন্দরের দ্বিতীয় তলায় যাত্রীদের জন্য সুবৃহৎ বসার জায়গা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্যও রাখা হয়েছে বসার স্থান ও টয়লেটের ব্যবস্থা। বন্দরের নিরাপত্তার জন্য ৩২টি পয়েন্টে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়। যেকোনো সমস্যার সমাধানে দেশের যাত্রীদের জন্য দুটি হটলাইন নম্বর ও বিদেশিদের জন্য একটি হটলাইন নম্বরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্দরের ভেতরে করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। নৌকাডুবির ঘটনা কমাতে মূল নদীবন্দর থেকে নিরাপদ দূরত্বে শ্যামবাজার ও বিনাস্মৃতি ঘাটে জেটি, পন্টুনসহ নৌকার ঘাট করা হয়েছে। প্রত্যেক নৌকায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রশিক্ষিত লোক। সদরঘাট এবং ওপারে কেরাণীগঞ্জে যাতায়াতের জন্য চালু হয়েছে ছয়টি ওয়াটারবাস। সদরঘাটের ভেতরে ও বাইরের দোকান ভেঙে ফেলা হয়েছে। লালকুঠি ঘাটের পাশে বসার জায়গা, বাগান, পার্কিং ইয়ার্ডের মধ্যে ওয়াকওয়ে, নদীর পারে ঝাউবাগান করা হয়েছে। নদীর দুই ধার দখলমুক্ত করে লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। দীর্ঘদিন ধরে পুরনো লঞ্চ, জাহাজকে নদীর পার দখল করে ভাসমান হোটেল বানানো হয়েছিল। এসব হোটেলের বর্জ্য নদীতে ফেলা হতো। জীর্ণ হোটেলগুলো উচ্ছেদ করে আহসান মঞ্জিলের সামনের জায়গায় কৃষ্ণচূড়ার বাগান করা হয়েছে।

    সরাসরি লঞ্চে না গিয়ে টিকিট কাউন্টার ও অনলাইনের মাধ্যমে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুন্দরবন, মানামী, অ্যাডভেঞ্চার, গ্রিনলাইন ও বরগুনার লঞ্চগুলোর টিকিট এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। নৌবন্দরের ছাদে ‘বুড়িগঙ্গা ভিউ রুফ টপ গার্ডেন’ রেস্টুরেন্ট করা হচ্ছে।

    বিআইডাব্লিউটিআইয়ের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের নৌবন্দর করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এই আদলে ঢাকা নদীবন্দরকে সাজানো হচ্ছে। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে চলমান নদী উচ্ছেদ কার্যক্রমে প্রায় ৮০ শতাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

    ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঐতিহ্য রক্ষা করে বুড়িগঙ্গা নদী ও সদরঘাটকে আধুনিক করার বিষয়টি আমার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বুড়িগঙ্গাপারের সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

    স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সৌন্দর্য বাড়াতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হবে। নাব্যতা রক্ষায় পুরনো সেতু ভেঙে নৌযান চলাচল উপযোগী করতে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০

    shikkhasangbad24.com |

    advertisement

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    advertisement
    শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
    advertisement

    সম্পাদক ও প্রকাশক : জাকির হোসেন রিয়াজ

    সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: বাড়ি# ১, রোড# ৫, সেক্টর# ৬, উত্তরা, ঢাকা

    ©- 2023 shikkhasangbad24.com all right reserved