অনলাইন ডেস্ক | ২৮ নভেম্বর ২০২০ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ
যে বয়সে মেধাবী রিতার থাকার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের শেষ পর্যায়ে কিংবা ভালো কোন কর্মস্থলে অথবা সোহাগী স্বামীর সংসারে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আনন্দ উল্লাসে। কিন্তু তা না হয়ে তাকে প্রায় দশ বছর যাবত শিকলবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে বাড়ির পাশের বাগানে খোলা একচালার নিচে। রিতার কষ্ট ও অনিরাপদ জীবন ধারণের দৃশ্য দেখলে যে কোনো হৃদয়বান মানুষই নীরবে চোখের জল না ঝড়িয়ে থাকতে পারবে না।
অনিরাপদ অবস্থায় ঘরের পাশে বাগানের মধ্যে প্রায় দশটি বছর কেটে গেলেও মেধাবী রিতার চিকিৎসার জন্য তার দরিদ্র বাবা-মায়ের পাশে দাড়ায়নি কেউ। রিতা আক্তার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামের আলাউদ্দিন দেওয়ানের চতুর্থ মেয়ে।
রিতার বাবার সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবচাইতে মেধাবী রিতা ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পরীক্ষার প্রস্তুতিও চলছিল ভালোই। কিন্তু হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে রিতা। ওই সময় দরিদ্র বাবা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করালেও আর মানসিক ভারসাম্য ফেরাতে পারেনি। এতে শুধু রিতার পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যায়নি, শিকলে বন্দী হয়ে গেছে রিতার ভবিষ্যত।
সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রিতা ২০১২ সাল থেকে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ির পিছনের বাগানের একটি গাছের সাথে শিকলবন্দী অনিরাপদ অবস্থায় একটি মাচায় দিন-রাত কাটাচ্ছে। রিতার জীবন যুদ্ধের কাছে হার মেনেছে রোদ, বৃষ্টি ঝড়ও। হয়তো কোনো স্বাভাবিক লোক হলে একটি রাতও এমন জায়গায় কাটাতে পারত না। রিতার স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়নি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে না পারা অসহায় বাবার আকুতি এখন সরকারসহ মানবিক সংগঠন বা ব্যক্তিদের কাছে।
ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য মনি পিয়ারু বলেন, আমাদের দেখা মতে আশপাশের মধ্যে রিতাই ছিল সবচেয়ে বেশি মেধাবী। কিন্তু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে জীবনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে রিতা এখন শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছে। যা একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে কারও পক্ষেই সহ্য করা অসম্ভব। দরিদ্র বাবার পক্ষে রিতার ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাও অসম্ভব। তাই আমরা সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রিতার সুচিকিৎসার আবেদন জানাচ্ছি।
রিতার মা মেহের বানু বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের টাকা পয়সার অভাবের জন্য আমার সবচেয়ে মেধাবী মেয়েটি আজ শিকলে বাঁধা। সমাজের বিত্তবান বা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমার আবেদন, রিতার স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে আমাদের পাশে দাঁড়ান।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তানভীর-আল-নাসীফ বলেন, সম্প্রতি বিষয়টি আমার নজরে আসার পর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রিতার সুস্থ্যতার জন্য আমরা সরকারিভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
বাংলাদেশ সময়: ২:০৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০
shikkhasangbad24.com | hossain reaz
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ |
১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ |
২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |