• বুধবার ২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    মিলছে না ভাড়াটিয়া

    অনলাইন ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর ২০২০ | ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

    মিলছে না ভাড়াটিয়া

    মিরপুর কালশী সড়কের ইউসুফ তুহিনের সংসার চলে বাড়ি ভাড়ার টাকায়। করোনার শুরুতেই তিনি বাড়িভাড়া কমিয়ে অর্ধেক করেছেন। তার পরও দুই মাস ধরে তাঁর একটি ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া নেই। পরিবার নিয়ে তিনি ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে বাস করেন।তিনি বলেন, ‘অনেকেই ভাড়া নিতে আসেন। তবে পরিবারের জন্য নয়, মেস হিসেবে ভাড়া নিতে চান। আমি মেস ভাড়া দিতে আগ্রহী নই। কারণ আমি এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করি।’

    বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা বেসরকারি সংস্থা ভাড়াটিয়া পরিষদের তথ্য মতে, ঢাকা শহরে বসবাসকারী আড়াই কোটি মানুষের মধ্যে বাড়ির মালিক ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। ৭০ শতাংশ ভাড়াটিয়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত।

    সংস্থাটি এই হিসাব দিলেও ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ বলা হয়েছে।

    ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকাগুলো বাদে বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ বাড়ির মালিক মধ্যবিত্ত। তাঁদের কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে জামির মালিক হয়ে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছেন, বাড়িভাড়ার আয় থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন এবং সংসারের খরচ চালান। আবার হাল সময়ে ঢাকা শহরে উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়ির মালিক হওয়া অনেকে নিজেরা কাজকর্ম করেন না। বাড়িভাড়ার আয়ই জীবিকা নির্বাহের পথ। আবার অনেক সরকারি কর্মজীবী তাঁদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি করেছেন। তাঁদের জীবনচলার একমাত্র অবলম্বন বাড়িভাড়া। এখন ভাড়াটিয়ার অভাবে এই শ্রেণির বাড়ির মালিক সংকটে পড়েছেন।

    ভাড়াটিয়াদের পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার পরিবার ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে এবং ২৫ হাজার পরিবার ঢাকার মূল শহর ছেড়ে শহরতলিতে বাসা ভাড়া নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত এবং পরিবারের প্রধানরা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। করোনার অজুহাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চাকরিচ্যুতি ও বেতন কমিয়ে দেওয়ার কারণে তাঁরা ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে তাঁদের একটি অংশ গ্রামে পরিবার রেখে ঢাকায় মেস ভাড়া করে থাকার চেষ্টা করছে।’

    মোহাম্মদপুর পিসি কালচার হাউজিং এলাকার ভাড়াটিয়া ছিলেন জমিরউদ্দিন। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বেতন কমিয়ে দেওয়ার কারণে তিনি পরিবার গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছেন।তিনি বলেন, ‘বেতন কমে যাওয়ায় ঢাকায় থাকা সম্ভব নয় বলে পরিবার গ্রামে রেখে আমি ঢাকায় মেসে উঠেছি।’ অন্যদিকে মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বাড়ির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমার বাড়ির দুটি ফ্ল্যাট শূন্য। ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না।’

    পুরান ঢাকার ৪১/১ নবাবগঞ্জ লেনের বাড়ির মালিক মোজ্জামেল হক বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমার চারটি ফ্ল্যাট ফাঁকা পড়ে আছে। করোনার আগে টু-লেট সাইনবোর্ড দেওয়ার আগেই ভাড়া হয়ে যেত। এখন কেউ ভাড়া নিতে আসছে না। আমার বাড়িতে বেশির ভাগ ভাসমান ব্যবসার লোকই ভাড়া থাকত।’ একই ধরনের কথা জানালেন পুরান ঢাকার ৪৩/১৫ নম্বর নবাবগঞ্জ লেনের বাড়ির মালিক টিটু মিয়া। তাঁর বাড়ির চারটি তলা ফাঁকা। ২৪/১ নম্বর জুরি আঙ্গুর লেনের বাড়ির মালিক নাসিরউদ্দিন সুমনের বাড়ির তিনটি তলা ফাঁকা। নবাবগঞ্জের মদনাক্ষেত এলাকার বাড়ির মালিক জহির মিয়ার বাড়ির পাঁচটি তলা ফাঁকা।

    মিরপুর পল্লবী এলাকার বাড়ির মালিক জুনায়েদ আহমদ বলেন, ‘আমি তিন মাস বাসা ফাঁকা রেখে শেষে গত মাস থেকে মেস হিসেবে ভাড়া দিয়েছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। তবে এতে সমস্যার তৈরি হয়েছে। এখন অন্য ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া পরিবারগুলো বলছে, মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়ায় তারা বাসা ছেড়ে দেবে।’ এই এলাকার আরেক বাড়ির মালিক মীর আহমেদুজ্জামান বলেন, ‘আমার সব সঞ্চয় দিয়ে চারতলা বাড়ি করেছি, সঙ্গে কিছু ঋণও নিতে হয়েছে। করোনার পর তিনটি পরিবার বাসা ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমি ঋণের কিস্তিও দিতে পারছি না, সিটি করপোরেশনের বিলগুলোও দিতে পারছি না, সংসার চলার অবস্থাও নেই। মহাবিপদে আছি।’

    ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, ঢাকায় কতসংখ্যক বাড়িতে ভাড়াটিয়া নেই তার সঠিক পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে নেই। তবে অনেক বাড়ি খালি রয়েছে, এটা ঠিক। বাড়িতে ভাড়াটিয়া না থাকলে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে যাবে।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০

    shikkhasangbad24.com |

    advertisement

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    advertisement
    শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
    advertisement

    সম্পাদক ও প্রকাশক : জাকির হোসেন রিয়াজ

    সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: বাড়ি# ১, রোড# ৫, সেক্টর# ৬, উত্তরা, ঢাকা

    ©- 2023 shikkhasangbad24.com all right reserved