• শনিবার ২৫শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ১১ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    মক্তব শিক্ষাকে গুরুত্ব দিন

    অনলাইন ডেস্ক | ২২ নভেম্বর ২০২১ | ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ

    মক্তব শিক্ষাকে গুরুত্ব দিন

    কোরআনে কারিম শিক্ষার প্রাথমিক স্তর মক্তব। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে মক্তব হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম পাঠশালা। প্রাচীনকাল থেকে মসজিদকে কেন্দ্র করে চলে আসছে মক্তব শিক্ষার কার্যক্রম। ইতিহাসে পাওয়া যায়, অনেক রাজা-বাদশাহ, আমির-উমারা, অলি-দরবেশ, পীর-মাশায়েখ, শিক্ষক-সাংবাদিক, কৃষক-শ্রমিক মক্তবের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেছেন। অনেক লোককে বলতে শোনা যায়, আমি জীবনে কোনোদিন স্কুলের ধারে-কাছে যাইনি। কিন্তু মক্তবে যাইনি, এমন কথা বলার মতো মানুষ সমাজে পাওয়া মুশকিল। এই হলো মক্তব শিক্ষার প্রভাব ও বিস্তৃতি। এভাবেই মক্তব শিক্ষা মুসলিম সমাজের অন্যতম সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বলা হয়, ভালো মানুষ হওয়ার জন্য মক্তব শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

    শিশুরা নৈতিক শিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করে কোরআন শিক্ষার পাঠস্থান মক্তব থেকে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো, ধীরে ধীরে সমাজ থেকে মক্তব শিক্ষা হারিয়ে যেতে বসেছে। ভোরবেলায় শিশুদের মক্তবে যাওয়ার চিরাচরিত দৃশ্য এখন আর গ্রামবাংলায় খুব একটা দেখা যায় না। মসজিদের বারান্দাগুলো দরুদ শরিফ, হামদ-নাত আর আলিফ-বা-তা এর মিষ্টি মধুর সুরের শব্দে মুখরিত হয় না। শোনা যায় না, শত কণ্ঠে সকালে কোরআনের আওয়াজ।

    যেহেতু মক্তব থেকে শিশুদের নৈতিক শিক্ষার যাত্রা শুরু, তা যদি হারিয়ে যায়, তাহলে আমাদের সামনেই আমাদের শিশুরা নৈতিকতা বিবর্জিত অবস্থায় বড় হয়ে উঠবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা আজকের শিশু আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দেবে। সেই শিশুরা সুন্দরভাবে বেড়ে না ওঠলে সভ্য সমাজের আশা করা যায় না। এ জন্য মক্তবগুলো চালু রাখা দরকার।

    অনেক মক্তব রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও যা চালু আছে, সেগুলোতে আগের মতো আনন্দ নেই, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই, নামে মাত্র চলে। একজন মুসলমান হিসেবে যতটুকু জ্ঞানার্জন জরুরি তার সিংহভাগ মক্তব থেকেই অর্জন করা সম্ভব। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে অজু করতে জানে না বা ফরজ গোসল করতে জানে না, সে নামাজ পড়বে কিভাবে? অন্তত নামাজ পড়ার জন্য কয়টি সুরা শুদ্ধভাবে জানা প্রয়োজন, একজন মুসলমান হিসেবে সেগুলো শিখে রাখা জরুরি। আর শৈশবেই এ আলোকে সন্তানদের গড়ে তোলা না গেলে কারণে-অকারণে সে সুযোগ হয়ে ওঠে না। এমন চিন্তা থেকে একসময় ভারতীয় উপমহাদেশে মসজিদে মসজিদে চালু হয় মক্তব শিক্ষা, যার মাধ্যমে প্রতিটি শিশু ইসলামের মৌলিক জ্ঞানগুলো অর্জন করতে পারত।
    ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে মক্তব হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম পাঠশালা

    মুঘল আমলে মক্তব শিক্ষার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল। মক্তবে কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও বড়দের সালাম এবং সম্মান দেওয়া, সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা ছাড়াও শিক্ষা দেওয়া ছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়। মক্তবে সহিহ-শুদ্ধভাবে সুরা-কেরাত পড়ার যোগ্যতা অর্জন, বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের মাসয়ালা শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে অজু, গোসল, তায়াম্মুম, দোয়া-দরূদ, কালেমা, নামাজ, রোজা, মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফনের কাপড় পড়ানো, দাফন করার নিয়মসহ বিভিন্ন খুঁটি-নাটি বিষয় শেখানো হয়।

    এক সময়য়ে ঐতিহ্য মক্তব শিক্ষা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার পেছনে মক্তব শিক্ষার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মক্তব শিক্ষা হচ্ছে ইসলামের আদি এবং মৌলিক শিক্ষা।

    জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। বিশেষত ধর্মীয় জ্ঞান না থাকলে ধর্ম মোতাবেক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। আর ধর্মীয় শিক্ষার হাতেখড়ি হয় মক্তবে। মক্তবের সুবিধা হলো, এখানে সকালে এক ঘণ্টা ধর্মীয় তালিম নিয়ে পড়ে স্কুলে স্বাভাবিক পড়াটা পড়া যায়। মুসলমানদের ঐতিহ্যের ধারক মক্তবগুলো আজ বিলুপ্তপ্রায়। মক্তবের অভাবে তৈরি হচ্ছে ধর্মীয় জ্ঞানশূন্য বিশাল জনগোষ্ঠী। দেশের সর্বত্র আজ মক্তবের সময় বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে মর্নিং শিফট চালু হওয়ায় শিশুরা মক্তবের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। একশ্রেণির অভিভাবক মক্তব শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন হওয়ায় শিশুদের কচি মনে ইসলামি মূল্যবোধের পরিবর্তে বিজাতীয় সংস্কৃতি প্রবেশ করছে- যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপদজনক। মক্তব শিক্ষার সে মূল্যবান সময়টুকু যদি পুনরুদ্ধার করা না যায়, তাহলে এটা নিশ্চিত যে, ঈমান-আকিদায় সমৃদ্ধ মুসলমান জাতি ভবিষ্যতে একটি দুর্বল জনগোষ্ঠিতে পরিণত হবে। শিশুদেরকে জীবনের প্রথমভাগে ইসলামি বুনিয়াদি শিক্ষা দেওয়া না হলে তাদের মনে ইসলাম সেভাবে স্থান পাবে না। ফলে পরবর্তী জীবনে নানা অপকর্মে জড়িয়ে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। ফলে ভবিষ্যত প্রজন্ম টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই মক্তব শিক্ষাকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষায় চেষ্টা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২২ নভেম্বর ২০২১

    shikkhasangbad24.com |

    advertisement

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০

    advertisement
    শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
    advertisement

    সম্পাদক ও প্রকাশক : জাকির হোসেন রিয়াজ

    সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: বাড়ি# ১, রোড# ৫, সেক্টর# ৬, উত্তরা, ঢাকা

    ©- 2023 shikkhasangbad24.com all right reserved