• শুক্রবার ২৪শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ১০ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    বড় ৫ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তিতে নারাজ, করোনায়ও ১০ স্থানে পরীক্ষা দিতে হবে

    অনলাইন ডেস্ক | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

    বড় ৫ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তিতে নারাজ, করোনায়ও ১০ স্থানে পরীক্ষা দিতে হবে

    করোনার এই সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা পুরনো ছকেই থাকছে। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বড় আরো চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ও সেদিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তারা এ পদ্ধতিতে না এলে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়বে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। ফলে করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দৌড়াতে হবে সারা দেশে। একজন শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে ১০ জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে।

    সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনার কারণে বাতিল করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাধ্যমিক পরীক্ষার (এসএসসি) ফলের ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া। আর এই সময়েই অর্থাৎ শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা করছে সরকার। অথচ তখনই ভর্তি পরীক্ষার জন্য দেশের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে দৌড়াতে হবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। তাহলে এইচএসসি পরীক্ষা কেন নেওয়া হলো না?

    গত ২১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব আসে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে বিভাগীয় শহরেও কেন্দ্র করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের পর বড় অন্য চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে হাঁটছে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবকের ভোগান্তি লাঘব এবং করোনার বিষয়টি আমরা চিন্তা করছি। এ জন্যই আমাদের ডিনবৃন্দ বিভাগীয় শহরেও পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করবে ভর্তি কমিটি।’ কেন আপনারা গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসছেন না—এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা ১০০ বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা করেই এগোতে হয়। নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটাও আমাদের আগে থেকেই নেওয়া।’

    জানা যায়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হচ্ছেন আচার্য বা রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কয়েক বছর ধরেই সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। তিনি এ ব্যাপারে উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু তাঁর সেই কথার মূল্যই দিচ্ছে না বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে গত বছর সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। এমনকি কয়েক বছর আগে থেকেই মেডিক্যাল কলেজগুলোও কেন্দ্রীয়ভাবে মাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ও (বুয়েট) পরিচালিত হয় বিশেষ আইন মোতাবেক। তাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বাধ্য করতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

    বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, বুয়েট আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এ ব্যাপারে গত বছরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কিভাবে এই পরীক্ষা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর জানানো হবে।

    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার আমাদের ডিনস কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আলোচনা হবে। এরপর একাডেমিক কাউন্সিলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ আপনারা গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাবেন কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।

    সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে বলেই বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসতে চায় না। এ ছাড়া মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষার কথা বলে তারা নিজেদের সবার চেয়ে ভিন্নভাবে দেখতে পছন্দ করে। ফলে ২০০৭ সাল থেকে ইউজিসি গুচ্ছ পদ্ধতির কথা বললেও বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহে তা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে।

    এক হিসাবে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি বাবদ মোট ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৫০ টাকা আয় হয়েছে। সাত হাজার ১১৮টি আসনের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ইউনিটে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৫৩৭টি ভর্তি ফরম বিক্রি করে এ টাকা আয় হয়।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফরম বিক্রি করে মোট আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ টাকা। ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও চারটি ইনস্টিটিউটে এক হাজার ৮৮৯টি আসনের জন্য তিন লাখ ৫৯ হাজার ৯৬২টি ফরম বিক্রি করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে মোট ১০ কোটি ২১ লাখ ২২ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। বাকি টাকার কী হয়েছে, তা জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি।

    জানা যায়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেহেতু শিক্ষার্থীদের পৃথক আবেদন করতে হয় না, তাই একই গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ফরম বিক্রির টাকা ভাগ হয়ে যাবে। এতে বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বেশি টাকা পেলেও তাদের আয় অনেকাংশেই কমে যাবে।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তিনিও গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে এখনই কথা বলতে রাজি হননি।

    রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহেই ভর্তি নিয়ে আমাদের বৈঠক আছে। তবে আমরা যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তাই আমাদের শিক্ষার্থী পছন্দ বা মূল্যায়নের একটা নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা আছে। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে গেলে সেভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি।’

    গত কয়েক শিক্ষাবর্ষে বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফরম বিক্রি থেকে কোটি কোটি আয় করে শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফরম বিক্রির ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা রাখার বিধান থাকলেও তাঁরা নামে মাত্র টাকা জমা রেখেছে। বাকি টাকা ইচ্ছামাফিক খরচ করা হয়েছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ ভর্তি ফরম বিক্রির টাকা তহবিলে জমা রাখার পরিবর্তে উল্টো তহবিল থেকে টাকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই ইউজিসিকে হিসাবও দিতে নারাজ।

    জানা যায়, একজন মেধাবী শিক্ষার্থী স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। এর বাইরে মেডিক্যাল কলেজেও ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। এ ছাড়া যদি ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসে তাহলে সেখানেও অন্তত তিনটি পরীক্ষায় বসতে হবে। এ ছাড়া বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইউনিটে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেন তাহলে এই করোনার মধ্যে ১০টিরও বেশি পরীক্ষায় বসতে হবে তাঁদের।

    গত বছর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পর সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চারটি ভাগে ভাগ করে চলতি বছর থেকে পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে ইউজিসি। সে সময় কয়েকজন উপাচার্য বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা—এই তিন ভাগে ভাগ করে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার প্রস্তাব দেন, কিন্তু ইউজিসি শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, প্রকৌশল ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ধাপে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানায়। গত মার্চের আরেক বৈঠকেও বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো পদ্ধতিতেই আসতে রাজি হয়নি। এমনকি গত ১৫ অক্টোবর ইউজিসির সভায়ও ওই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো মতামত পাওয়া যায়নি।

    ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা নিজেরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। তবে এবার করোনার কারণে কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলাম। যেহেতু রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসাটা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বাকি যারা আছে তাদেরও আমরা জোর করে চাপিয়ে দিতে পারব না। তবে আমরা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দুর্দশা লাঘবে এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০

    shikkhasangbad24.com |

    advertisement

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    advertisement
    শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
    advertisement

    সম্পাদক ও প্রকাশক : জাকির হোসেন রিয়াজ

    সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: বাড়ি# ১, রোড# ৫, সেক্টর# ৬, উত্তরা, ঢাকা

    ©- 2023 shikkhasangbad24.com all right reserved