• বুধবার ২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

    শিরোনাম

    দোকানের কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক

    অনলাইন ডেস্ক | ২২ নভেম্বর ২০২০ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

    দোকানের কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক

    রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন তিনি। পরে মৌচাক মার্কেটে ক্রোকারিজ পণ্যের দোকানে একই কাজ নেন। এরপর একটি দোকান খুলে ব্যবসাও শুরু করেন। সেখানেই পরিচয় হয় এক লাগেজ পার্টির সঙ্গে। একসঙ্গে মিলে সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কাপড়, প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্য লাগেজে আনা-নেওয়া শুরু করেন। একইভাবে সোনা চোরাচালানেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। অবৈধভাবে আনা সোনা বাজারজাত করতে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে ‘উমা জুয়েলার্স’ নামে একটি দোকানও নেন। শুরু করেন হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার।

    ২০০১ সালে প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের কথিত অনুদান দিয়েই হাত করেন। একইভাবে গুলশান-বাড্ডা এলাকার সন্ত্রাসীদের ‘অনুদান’ দিয়ে হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী। রাজউকের নথিপত্র জালিয়াতি করে মালিক বনে যান দুই শতাধিক প্লটের। এই ব্যক্তিটি হলেন মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির।

    সোনা ব্যবসায়ী পরিচয়ে মনির সখ্য গড়ে তোলেন রাজধানীর বাড্ডার বিএনপি নেতা ও কাউন্সিলর আব্দুল কাইউমের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরে বিএনপির ডোনার বা অর্থদাতা বনে যান মনির। কাইউম বর্তমানে পলাতক।

    রাজধানীর প্রগতি সরণির কোকা-কোলা এলাকায় ‘অটো কার সিলেকশন’ নামের গাড়ির বড় শোরুমের মালিকও মনির। গত শুক্রবার মেরুল বাড্ডার বাসায় র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ার পর তাঁর উত্থানের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ওই বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, নব্বই দশকের বিক্রয়কর্মী মনির এখন অন্তত এক হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। দেশে-বিদেশে তাঁর বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

    র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সোনা চোরাচালান থেকে টাকা উপার্জন করে রাজনৈতিক দলের নেতা এবং দেশে-বিদেশে থাকা সন্ত্রাসীদের কথিত অনুদান দিয়ে হাতে নিয়ে সম্পদ বাড়িয়েছেন মনির। ছিলেন অনেকটা নিরাপদে। অবৈধ টাকা ও কর্মকাণ্ড আড়াল করতে চালু করেন গাড়ির ব্যবসা। তিনি গণপূর্ত ও রাজউকের কিছু ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিকে ‘অনুদান’ দিয়ে ম্যানেজ করে প্লট দখল করেন। সরকার বদল হলেও ‘অনুদান’ ব্যবহার করে বাণিজ্যে দাপট ধরে রাখেন তিনি।

    র‌্যাবের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কেরানীগঞ্জের ছেলে মনির বড় হয়েছেন বাড্ডায় তাঁর নানাবাড়িতে। লেখাপড়া করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। রাজধানীর মেরুল বাড্ডা, (ডিআইটি প্রজেক্ট) নিকুঞ্জ, পূর্বাচল, উত্তরা, কেরানীগঞ্জে দুই শতাধিক প্লট ও বাড়ি দখলে নিয়েছেন মনির। মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকার ১৩ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর প্লটে নির্মাণ করেছেন ছয়তলার একটি বাড়ি। বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা ডুপ্লেক্স এবং ওপরের বাকি ফ্লোরগুলো তিনি ভাড়া দেন। যদিও করোনাকালে ভাড়াটিয়া সব চলে গেছেন। গোল্ডেন মনির হুন্ডি ব্যবসা, সোনা চোরাচালানের অবৈধ টাকা আড়াল করতে আয়ের উৎস হিসেবে ‘অটো কার সিলেকশন’ দেখান। সেখানেও তিনি অবৈধ পথে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করতেন।

    সাবেক কাউন্সিলর কাইউমের মাধ্যমে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর তিনি দলটির একজন ‘ডোনার’ হয়ে ওঠেন। বাড্ডা-গুলশান এলাকার কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গেও সখ্য আছে মনিরের। ঘুষ দিয়ে তিনি রাজউকে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। রাজউকের এক সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে মনিরের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁর সহযোগিতায় মনির রাজউক কার্যালয়ে নিজের অফিস হিসেবে একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলেন। রাজউকের সিল জালিয়াতি করে একটি জমির দলিল নিজের নামে করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রাজউক তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলাও করে।

    র‌্যাব সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি ব্যবসার আড়ালে অপকর্ম করলেও মনির ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিএনপির আমলে ব্যাপক প্রভাবশালী মনির সাম্প্রতিক সময়েও ‘ডোনেশন’ দিয়ে প্রভাব ধরে রাখেন। হিন্দু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন মানুষের জমি দখল শুরু করেন। নথিপত্র জালিয়াতি করে অনেক মানুষকে হয়রানি করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করে। সে তদন্তে মনিরের চোরাকারবার থেকে উত্থান এবং জালিয়াতির কারবারের তথ্য উঠে আসে।

    র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মনির একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ওই দলের ‘অর্থ জোগানদাতা’। তবে তিনি কোনো দলের নাম উল্লেখ করেননি। গাউছিয়া মার্কেটের কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী থেকে শুরু করে মনিরের সোনা চোরাচালানে জড়িত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০২০

    shikkhasangbad24.com |

    advertisement

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    advertisement
    শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
    advertisement

    সম্পাদক ও প্রকাশক : জাকির হোসেন রিয়াজ

    সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: বাড়ি# ১, রোড# ৫, সেক্টর# ৬, উত্তরা, ঢাকা

    ©- 2023 shikkhasangbad24.com all right reserved