অনলাইন ডেস্ক | ২২ ডিসেম্বর ২০২০ | ৬:৩৮ অপরাহ্ণ
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকে সামনে রেখে ‘পেঁয়াজের বাল্ব’ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফরিদপুরের চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা তাদের। এখন চলছে পুরোদমে বাল্ব রোপণের কাজ।
এ বছর চার দফায় বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পেঁয়াজের বাল্ব রোপণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এরই মধ্যে অনেক জমিতে বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তুলনামূলক উঁচু জমিতে চাষিরা পেঁয়াজের বাল্ব রোপণ শুরু করেছেন।
অনেক ক্ষেতে পেঁয়াজ গজিয়ে সবুজ আকার ধারণ করেছে। অনেক জমিতে চাষ দেয়া হচ্ছে। চাষিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য। ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় পেঁয়াজ বীজ চাষির সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের কালো দানা এলাকায় ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ সোনার মতোই। তাই এই বীজকে সবাই ‘কালো সোনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট চাহিদার ৭৫ ভাগ পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুর জেলার চাষিরা উৎপাদন করে থাকেন। আর তার মধ্যে সিংহভাগই উৎপাদন করে থাকেন জেলার অম্বিকাপুরের চাষি সাহিদা বেগম। তিনি পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করে হয়েছেন কোটিপতি। তাকে অনুসরণ করে এ অঞ্চলে প্রায় দুই শতাধিক চাষি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে নেমেছেন।
সাহিদা বেগম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে ১৫ দিন পিছিয়ে গেছি। অন্যান্য বছর এই সময়ের আগে পেঁয়াজের বাল্ব লাগানো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত ৩০ একর জমিতে বাল্ব লাগানো শেষ হয়েছে। আরও ৪-৫ একর লাগানো বাকি আছে। এখন পুরোদমে চাষাবাদ চলছে, প্রতিদিন মাঠে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছি। শ্রমিকদের জন্য রান্নাও করতে হয়। মাঝে মাঝে খাবারও মুখে তুলে দিতে হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে না থাকলে ঠিকমতো কাজ করে না।’
তিনি জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর তার জমির পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। একদল ক্ষেতে বাল্ব রোপণ করছেন, একদল সেচ দিচ্ছেন, কেউ সার দিচ্ছেন, কেউ আবার ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বীজ উৎপাদনের কার্যক্রম, কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলবে একটানা মে মাস পর্যন্ত।
সাহিদা বেগম বলেন, পেঁয়াজ বীজ লাভজনক কৃষি, তবে এতে ঝুঁকিও আছে। ১ একর জমি চাষ করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ হয় ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। আর এক একর জমি থেকে ৩শ কেজি বীজ পাওয়া যায়। সরকার পেঁয়াজ বীজ চাষিদের নয় মাসের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অল্প সময়ের কারণে চাষিরা তেমন উপকার পান না। ঋণের মেয়াদ ১ বছর করা হলে চাষিরা তাদের উৎপাদিত বীজ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।
ফরিদপুর অঞ্চলে প্রচুর পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হলেও এখানে বীজ সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো হিমাগার। জরুরিভিত্তিতে ফরিদপুরে একটি হিমাগার নির্মাণেরও দাবি জানান সাহিদা বেগম।
তিনি বলেন, ‘দুই বিঘা জমি দিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেছিলাম। ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে এখন এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি। আমার পেঁয়াজ বীজ খামারে কাজ করে অনেকেই তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছে। আমার চাষাবাদ দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক পেঁয়াজ বীজ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামীতে আমরা আরও বেশি করে বীজ উৎপাদন করতে পারবো। দেশের চাহিদা পূরণ করে আমরা বিদেশেও রফতানি করতে পারব। গত বছর ২শ মন বীজ পেয়েছিলাম। এ বছর ২২০ থেকে ২২৫ মন বীজ পাব বলে আশা করছি।’
জেলার মধুখালী উপজেলার বাগাট গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিষ দাস বলেন, পেঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মতো।
তিনি বলেন, গত বছর ৩ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছিলাম। এ বছর ৬ একর জমিতে চাষ করছি। বীজ লাগানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছরও লাভবান হতে পারবো।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হজরত আলী বলেন, দেশের উৎপাদিত বীজের ৭৫ ভাগ ফরিদপুর জেলায় উৎপাদন হয়ে থাকে। এ জেলার বীজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার চাষিরা ফরিদপুর অঞ্চলের বীজ সংগ্রহ করে থাকেন। পেঁয়াজ বীজ চাষে চাষিদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০
shikkhasangbad24.com | hossain reaz
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |